Ahr Sumon

+8801786-661978

“যদি স্মৃতি প্রতারণা করত…”

আহাদ! আহাদ! | যদি ফিরে যেতাম ১৪শো বছর আগে | হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ইসলামিক কবিতা

মাঝে মাঝে ভাবি—
যদি স্মৃতি হতো বিশ্বাসঘাতক,
আর পৃথিবী ফিরে যেত
সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগের
সেই পবিত্র, আদিম সময়টায়।

ধরা যাক, একদিন আমি দাঁড়িয়ে আছি
এক পুরোনো হাটে,
একটা ধূলিমাখা কূপের পাশে,
বয়সে নুয়ে পড়া খেজুর গাছের ছায়ায়—
সেখানে এক অনারব বণিক
আমাকে তুলছে নিলামে।

আর এক ধনী আরব আমাকে কিনে নেয়
সামান্য মূল্যে।
সময়টা যেহেতু বর্বর,
মানুষ বেচাকেনার যুগ—
সুতরাং আমি এখন তার গোলাম,
সে আমার প্রভু।

তার খেয়ালে আমি কাজ করি—
পানি আনি, খেজুর বাগান সাজাই,
মেষ চড়িয়ে বেড়াই মরুভূমির ধারে।
মানুষ তখন মানুষের প্রভু—
আর আমার জীবন কাটে
কর্তার আজ্ঞায়, শুশ্রূষায়।

একদিন—
বিষণ্ণ এক বিকেল,
সূর্য পাহাড়ের কোলে ঢলে পড়ছে,
আকাশ গুটিয়ে নিচ্ছে তার নীলচাদর,
লু হাওয়া ঠাণ্ডা হয়ে আসছে একটু একটু করে।

সেই সন্ধ্যায়, হয়তো আধো ঘুমে,
কিছু অপরিচিত কণ্ঠস্বর
আমার চেতনাকে কাঁপিয়ে তোলে—
যেন ডুবো হাঁস উঠে এসে জল ঝেড়ে ফেলে।

এক কাফেলা এসে দাঁড়ায়—
ক্ষুধায় কাতর, ক্লান্ত তাদের চোখে,
তবু এক অমোঘ দীপ্তি;
মুখে শান্তির হাসি।

তাদের একজন আমার দিকে এগিয়ে এসে বলে—
“ভাই, গোলামি করো কেবল আল্লাহর!
তাঁর ছাড়া আর কেউ প্রভু নয়,
নেই কোনো ঈশ্বর।”

আমি থমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি—
“আল্লাহ? তিনি কে?”

সে বলে—
“তিনি এক, অদ্বিতীয়, অংশীদারবিহীন।
সকল রাজত্ব তাঁর—
তিনি রাজাধিরাজ।”

“তিনি কোথায় থাকেন?”

“আরশের ওপরে,
তবু বান্দার খুব কাছাকাছি—
যতটা কাছে এলে
শ্বাসের শব্দও শোনা যায়।”

“তাঁকে চিনিয়েছে কে?”

“মুহাম্মাদ!
তিনি আল্লাহর প্রিয় রাসুল—
তাঁর ওপর নাজিল হয়েছে কিতাব।”

“তিনি কি রাজা?”

“না, তিনি একজন সরল জীবন যাপনকারী।
গরিবদের সঙ্গে থাকেন,
নিজের খাবারও বিলিয়ে দেন।”

“তাঁর বার্তা কী?”

“আহাদ! আহাদ!
আল্লাহ এক! একমাত্র তিনিই!”

তারপর—
আমি ভুলে যাই পৃথিবীর সমস্ত গান,
সকল কবিতা, সকল শব্দ…
শুধু “আহাদ!”
এই শব্দটাই হয়ে ওঠে আমার ভাষা।

সেই প্রভু,
যে একদিন আমাকে কিনেছিল গোলামের হাটে,
তাকে আর মানি না প্রভু জেনে।
সে আমাকে শুইয়ে দেয়
জ্বলন্ত বালুর বুকে,
মাথার ওপর সূর্যের আগুন,
তৃষ্ণায় ফেটে যায় বুক।

তবু আমার জিহ্বা থামে না—
“আহাদ! আহাদ!”
চিৎকার করি, ফুঁপাই, কাঁদি—
জানিয়ে দেই এই জগৎকে:
“তোমাদের কারো গোলামি মানি না আর!”

এবং হঠাৎ একদিন
ঘুম ভাঙে আমার চোখে—
এক স্বপ্নে আসেন এক সুদর্শন মানব,
তিনি বলেন:
“সুসংবাদ লও!
তোমার কণ্ঠে উচ্চারিত ‘আহাদ’
আজ বাতাসে ভেসে বেড়ায়,
আকাশে প্রতিধ্বনি তোলে।
তুমি আজ ইসলামের আহ্বানকারী,
তুমি আজ মুয়াজ্জিন!”

আর তখন—
আবু বকর,
সে ধনী আরব,
যে কিনেছিল আমাকে একদিন,
সে এসে কিনে নেয় আবার—
তবে এবার মুক্তির জন্য।
মানুষের শেকল ভেঙে
তাওহিদের শেকলেই আমি খুঁজি চিরমুক্তি।

মুহাম্মাদ ﷺ—
যাঁর কণ্ঠ হতে আমি ধার করেছিলাম
‘আহাদ’ শব্দটি—
তিনি আমাকে দেখে উচ্ছ্বসিত হবেন!
তাঁর প্রশান্ত মুখাবয়ব
আমার হৃদয়ে ছড়িয়ে দেবে খুশির জোয়ার।

আমি তাঁর দুহাতে চুমু খেতে খেতে বলব—
“ফিদাকা আবি ওয়া উম্মি, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
আমার মা-বাবা আপনার জন্য কোরবানি হোক!”

তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরবেন—
আর আমি ভুলে যাব
জীবনের সব জ্বালা,
বালুর সব আগুন,
পিঠের ওপর চাপা পাথর—
সব ব্যথা গলে যাবে
নবিজির আলিঙ্গনের উত্তাপে।

মাঝে মাঝে ভাবি—
যদি স্মৃতি সত্যিই প্রতারণা করত,
আর আমি ফিরতে পারতাম
সাড়ে চৌদ্দশো বছর পেছনে…

তাহলে আমি হাসিমুখে বিক্রি হতাম হাটে,
আরব, অনারব—
যে যার ইচ্ছেমতো রাখুক পাথর আমার বুকে;
শুধু যদি পাই নবিজির সেই একটুখানি আলিঙ্গন!

📚 উৎস ও প্রেরণা:

এই হৃদয়স্পর্শী লেখাটি প্রেরণা পেয়েছে আরিফ আজাদ রচিত “যয়তুন বৃক্ষের ছায়া” বইয়ের একটি অধ্যায় থেকে। ইসলামিক ভাবনার এক গভীর আবেশে মোড়ানো এই বইটি নিঃসন্দেহে আপনার হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।

👉 📖 বইটি কিনতে ভিজিট করুন:
🔗 https://sukunpublishing.com/book/arif-azad-book

👉 🌐 আরিফ আজাদ-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট:
🔗 https://arifazad.com

📖 আরও পড়ুন: SEO সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ব্লগ:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *